রবিবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৫

চলতে শুরু




এই উত্তাল ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমার রাজনীতি প্রবেশ ।তখন আমাদের সামনে প্রশ্ন ছিল ভারত দ্বি খণ্ডিত হয়ে ভারত স্বাধীন হয়েছে । এই দেশের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করব এই প্রেরনা আমার অন্তরে ছিল । মানুষ শুনতে চায় ,মানুষ জানতে চায় । প্রকৃতি ,পরিবেশ ,আর্থ সামাজিক অবস্থা সবগুলি তার মনে আলোড়ন সৃষ্টি করে । জন্ম নিচ্ছে ন্তুন নূতন ধ্যান ধারনা । ব্যক্তি  মানুষ সেখান থেকে তার অবস্থান ঠিক করে । পাঁচের দশকে উত্তর বাংলার মালদহ জেলার এক গ্রামীণ মৈথিল ব্রাম্নন পরিবারের সন্তান নিজের চোখে দেখে শ্রেণী স্বার্থ ত্যাগ করে কমিউনিস্ট পার্টীতে এসেছিলাম । কলম চালানো ও সংগঠন গড়ার অদ্ভুত শক্তি থাকার ফলে মালদা জেলার তৎকালীন কমিউনিস্ট নেতা মানিক ঝা এর অনুগামী ছাত্র ও যুব আন্দোলনের কর্মী হিসাবে কাজ করেছি । আমি দেখেছি শতধা বিভক্ত শাখা প্রশাখা র পূর্ণ ইতিহাস , কেন কমিউনিস্ট পার্টী বারে বারে ভেঙ্গেছে, দল উপদল সৃষ্টি করে নেতারা নিজ নিজ স্বার্থ কি ভাবে রক্ষা করেছেন । তার তথ্য নিষ্ঠ ইতিবৃত্ত নেই । যা আছে তা সবটাই এই দল উপদলের বকযন্ত্রের চোলাই মাত্র ।
আজ আলোচনা করা জরুরী কমিউনিস্ট পার্টী গঠনের ইতিহাস , সি পি আই এম ,সি পি আই ও সি পি আই এম এল , এস ইউ সি গঠনের পিছনে র কারন ।
একটি জাতি যত ক্ষুদ্র ই হোক না কেন সে যদি হিম্মতের সংগে নিজের ভাগ্য নিজে গড়ার সংগ্রামে নামে তাহলে সে অনেক অঘটনই ঘটিয়ে দিতে পারে ।
বিজয় লাভের পরেও  কিছু পার্টী রং বদলায় প্রতিক্রিয়াশীল সাং স্ক্রিতিক এবং মানসিক প্রভাব কে না বুঝে পার্টীর দরজা হাট করে খুলে জন্য পার্টীতে জন্ম নেয় আয়েশি দর্শন ভোগ বিলাসের মূল্যবোধ মধ্যবিত্ত বিশৃঙ্খল জীবনযাত্রা থেকে আসে আমলাতান্ত্রিক ঝোঁক নির্দেশ দিয়ে কাজ করানোর মানসিকতা । ইতিহাস তার প্রয়োজনে সৃষ্টি করে নেয় তার গতিপথ , পরিবর্তনের নায়ক ,যোগ্য নেতৃত্ব   ,ইতিহাসের দ্বারা ইতিহাসের প্রয়োজনে সৃষ্ট এই মানুষ ই আবার হাজার হাজার মানুষকে নেতৃত্ব দেন ।
ন্তুন ইতিহাস রচনা করেন । কমিউনিস্ট মতাদর্শের সাথে প্রথম বিরোধ বাধে এর স্বীকার করেনা যে "ব্যাক্তির ভুমিকা বাদ দিয়ে কোন ইতিহাস হয় না ।" ইতিহাসে ব্যক্তির ভুমিকায় তিনি সফল যিনি যৌথ নেতৃত্ব মানতে পারেন , চালাতে পারেন । এদেশের কমিউনিস্ট ঠিক কোন সময় গড়ে উঠেছে বা কোন সালটা তার জন্ম সাল তা নিয়ে মতভেদ আছে । এদেশের মিরা ট ষড়যন্ত্র মামলা অনুসারে {১৯২৯}  যা পৃথিবীতে এত দীর্ঘ চলা রাজনৈতিক মামলা । যেখানে গ্রেপ্তার করা হয় দুজন ব্রিটিশ নাগরিক কে যারা ব্রিটিশ কমিউনিস্ট কর্মী । যারা এদেশে এসেছিলেন কমিউনিস্ট গড়ার জন্যে ।  এই আদালত কক্ষ কে মুজফফর আহমেদ কমিউনিস্ট পার্টী কেন ও পুজিবাদ কে আক্রমণ করার মঞ্চ হিসবে গ্রহণ করে ছিল । কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিক চেষ্টা চালাচ্ছিল এদেশে এক দল দৃঢ় চেতা কমিউনিস্ট বানাতে যারা  এদেশে সাম্রাজ্যবাদ ও পুজিবাদ বিরোধী সংগ্রাম গড়ে তোলার । তারা মনে করত বিশ্ব প্রতিক্রিয়াশীল দের প শ্চাদ ভুমি । এশিয়া এবার মুক্তি যুদ্ধের ঘাটি । কমিউনিস্ট পার্টী ২০ তে না ২৪ শে প্রতিষ্ঠিত সে নিয়ে বিতর্কে না গিয়ে বলা যায় এদেশের কিছু যুবক ভারতের জনতার মুক্তির জন্যে এই পার্টী গড়েন ।
নানা অভ্যন্তরীণ সমস্যা কাটিয়ে ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে ওঠা গ্রপ একত্রিত করে এই পার্টী গড়ে ওঠে ।
কর্মীরা নির্বাচন করে নেতৃত্ব । জনগণের মেজাজ এবং অবস্থা যা প্রতিফলিত হয় । তার উপর নির্ধারিত করে কর্মসূচী ও রণনীতি ,  রণকৌশল  । একবার এটা গৃহীত হয়ে গেলে অবশ্যই সেটা প্রত্যেকে ওপর
স্ব আরোপিত ।

মার্কসবাদ লেনিনবাদ মানুষকে পরিপূর্ণ বিকাশের জন্যে চাই শৃঙ্খলা মুক্ত করা । পুঁজিবাদী দাসত্ব থেকে মুক্ত করা ।

ব্রিটিশ শাসনের ফলাফল নিয়ে বিশ্লেষণ করে কার্ল মার্ক্স লিখেছিলেন " অতীতের হিন্দুস্থানে যত গৃহযুদ্ধ , আক্রমণ ,বিপ্লব ,বিজয় অভিজান ,দুর্ভিক্ষ একের পর এক তদের জটিলতা নিয়ে বিধ্বংসী চেহেরাই গ্রহণ করে থাকুক না কেন , তা কখন ই সে দেশের গভীরে প্রবেশ করতে পারেনি । ইংল্যান্ড ভারতীয় সমাজের সমগ্র কাঠামো টি ই ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছে । তার পরিবর্তে কোনও ন্তুন পুনর্গঠনের চিহ্ন পাওয়া যাচ্ছে না । তাদের পুরাতন জগতকে হারিয়ে এবং ন্তুন সমাজ না পেয়ে ,ভারতীয় দের দুর্গতির উপর এক বিশেষ ধরনের বিষাদের প্রলেপ পড়ছে । ব্রিটেন শাসিত হিন্দুস্থান বিছিন্ন হয়ে পড়েছে । ব্রিটেন শাসিত হিন্দুস্থান বিছিন্ন হয়ে পড়েছে তার সমস্ত প্রাচীন ঐ তিহ্য ও সমগ্র অতীত ইতিহাস থেকে ।


প্রথম আন্তর্জাতিকের সাধারন পরিষদের একটি সভা যাতে সভাপতিত্ব করেন স্বয়ং কার্ল মার্ক্স সেখানে কলকাতায় একটি শাখা খোলার প্রস্তাব অনুমোদিত হয় । শেষে কার্ল মার্ক্স মন্তব্য করেন " শ্রমিক শ্রেনির আশা আকংখার সাথে খাপ খাঁয় এমন একটি সংগঠন হচ্ছে প্রথম আন্তর্জাতিক । বিভিন্ন জাতি ও ধর্মের মানুষদের তা ঐক্যবদ্ধ করতে সক্ষম হবে  এবং শ্রমজীবী দের রাজনৈতিক ও সামাজিক অধিকার অর্জন করতে  সাহায্য করবে ।

পথের স ন্ধানে ।
ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ জাতীয় বিপ্লবী বাঘা যতী নের ডান হাত নরেন্দ্র নাথ ভট্টাচার্য , গ্রেপ্তারী পরোয়ানা মাথায় নিয়ে মারকিন যুক্ত রাষ্ট্র থেকে মেক্সিকো তে গিয়ে সেখান কার সমাজতন্ত্রী দলের
সম্পাদক নির্বাচিত হন । রাশিয়ার বলশেভিক সংগঠক বোর দিনের সং স্পর্শে এসে তিনি দীক্ষিত হন কমিউনিস্ট মতবাদে । লেনিনের আমন্ত্রণে তিনি ১৯২০ সালে মস্কো যান কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের দ্বিতীয় কংগ্রেসে যোগ দিতে । এখানে লেনিন একটি প্রস্থাব পেশ করেন মানবেন্দ্রনাথ রায় {নরেন্দ্রনাথ} লেনিনের সাথে একমত না হয়ে সং যোজনী প্রস্তাব এনে ছিলেন । তাতে তিনি বলেন " ভারতে একটি পরাক্রান্ত কমিউনিস্ট পার্টী গড়ার মত সমস্ত উপাদানই রয়েছে । কিন্তু ব্যাপক জনসাধারণ  ও ভারতের বিপ্লবী আন্দোলন জাতীয় আন্দোলনের সঙ্গে নিজেদের কোন ও মিল দেখতে পায় না ।
সেদিন লেনিন মানবেন্দ্রনাথের মতকে সংকীর্ণতা বাদে দুষ্ট ও ভ্রান্ত বলে সমালোচনা করে ছিলেন কিন্তু তার মতকে সরাসরি বর্জন করেনি । সেদিন " বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক জাতীয় আন্দোলন " কে মানবেন্দ্রনাথের বক্তব্য কে লেনিন তার থিসিস পরিবর্তন করে চুরান্ত ভাবে লিখলেন " বৈপ্লবিক মুক্তি আন্দোলন " লিখলেন ।
মানবেন্দ্রনাথ রায় ও বহু বছর পর এই ঘটনার স্মৃতি চারন করে বলেন " সেটা সম্ভবত আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ অভিজ্ঞতা । একজন মহৎ নেতা আমাকে তাঁর সমকক্ষ ধরে নিয়ে ব্যবহার করলেন এবং এই আচরণের দ্বারা তাঁর নিজের মহত্বের প্রমান দিলেন । অনায়াসে ই  বলতে পারতেন যে একজন অখ্যাত ছোকরার সঙ্গে তর্ক করে তাঁর মুল্যবান সময় তিনি নষ্ট করতে পারবেন না । আর তাহলে ঐ আন্তর্জাতিক কংগ্রেসে আমার বক্তব্য পেশ করার কোন সুযোগই আমি পেতাম না ।"